নোয়াখালীতে সমুদ্রবন্দর হবে: খালিদ মাহমুদ চৌধুরী
ডেস্ক রিপোর্ট

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নোয়াখালীতে সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে চায় সরকার। নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাটিতে ও চট্টগ্রামে সন্দ্বীপের উড়ির চরের উজানে বঙ্গোপসাগরের চ্যানেলে এই বন্দর নির্মাণ করা হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর থেকে চাপ কমাতে এই বন্দর স্থাপন করা হবে। গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নতুন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এ পরিকল্পনার কথা জানান। নোয়াখালীর স্থানীয় সংসদ সদস্য (নোয়াখালী-৪) এ বিষয়ে একটি ডিও (আধা সরকারি পত্র) লেটার সরকারকে দিয়েছেন বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত আব্দুর রৌফ চৌধুরীর একমাত্র পুত্র খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে উঠে এসেছেন। ছাত্রজীবনে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্র রাজনীতি শেষ করে তিনি আওয়ামী লীগের মূল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। এ সময় তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সান্নিধ্য লাভ করেন। ২০০১-০৬ সময়ে তিনি সুধা সদনে বসে শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করতেন। জরুরি অবস্থার সরকারের সময় শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।
দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার স্নেহধন্য খালিদ মাহমুদ ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে দিনাজপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। টানা তিনবার নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য এবারই প্রথম সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। দায়িত্ব পেয়েছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর। এই মন্ত্রণালয়ে পূর্ণমন্ত্রী না থাকায় একাই তিনি সামলাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়ের কাজ। বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) বিকালে মন্ত্রণালয়ের নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এ সময় খোলামেলা কথা বলেন মন্ত্রণালয়, সরকার ও সংগঠন নিয়ে। আলোচনায় একপর্যায়ে উঠে আসে নোয়াখালীতে সমুদ্রবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনার বিষয়টি। তিনি জানান, নোয়াখালীতে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের চ্যানেলে সমুদ্রবন্দর করা যায় কিনা, তা তারা ভাবছেন। তিনি বলেন, ‘নোয়াখালীর ওই চ্যানেলে বন্দর করা হলে ঢাকার পানগাঁও কন্টেইনার টার্মিনাল আরও গতিশীল হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমবে। ’
সমুদ্রবন্দর নির্মাণ পরিকল্পনার নেপথ্যের কারণ উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নোয়াখালীতে একটি বিমানবন্দরও হবে। এ জন্য আগেই জায়গা চূড়ান্ত হয়ে আছে। এছাড়া, সেখানে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলও হবে। আর এখানে সমুদ্রের যেহেতু চ্যানেল রয়েছে, তাই পোর্ট করা গেলে তো আরও বেশি কার্যকরী হবে।’
নিজের মন্ত্রণালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দিকে আগে কখনও দৃষ্টি দেওয়া হয়নি, যেটা হয়েছে গত ১০ বছরে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই মেয়াদের সময়কালে যতটা এগিয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে, আমাদের যতটা নৌপথ ছিল, ফি-বছর তা কমতেই ছিল। কিন্তু গত ১০ বছরে এটি কমেনি বরং প্রায় দুই হাজার কিলোমিটারের কাছাকাছি নৌপথ বেড়েছে। নৌযান ক্রয়, নৌপথ সচল রাখতে ড্রেজিংসহ নৌখাতের উন্নয়নে এই ১০ বছরে অনেক কিছুই হয়েছে। বেশ কিছু চলমান প্রকল্প রয়েছে। পাশাপাশি এবারের নির্বাচনে ইশতেহারেও নৌখাতের উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নৌ- মন্ত্রণালয়ে আগে গতি ছিল না। গত ১০ বছরে একটি গতি এসেছে। তবে দীর্ঘ ৩০/৩৫ বছরে যে জঞ্জাল তৈরি হয়েছিল, তা এত অল্প সময়ে এই পর্যায়ে নিয়ে আসা কঠিন। আর এই মন্ত্রণালয় এতটা বিস্তৃত যে এটাকে জাতীয়ভাবে দেখলে চলবে না। কেবল জাতীয় নয় এটাকে আন্তর্জাতিক কনটেস্টে দেখতে হবে। আমাদের পোর্টগুলোর কী অবস্থা, তা তুলনা করতে হবে আন্তর্জাতিক পোর্টগুলোর সঙ্গে। আমাদের পোর্টগুলোর আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা তো দূরের কথা, জাতীয়ভাবে যতটা করার কথা সেটাও হয়নি। এদিকে কোনও নজরই অতীতে দেওয়া হয়নি। এখানে মনোযোগ না দেওয়ার কারণে ফাঙ্গাস পড়ে গেছে। এটাকে সারাতে হবে। এগুলো সারানোর জন্য মন্ত্রণালয়ের সাচিবিক দায়িত্ব যারা পালন করছেন, তাদেরকে আরও বেশি দক্ষ ও গতিশীল হতে হবে। তাদেরকে সেভাবে দক্ষ ও গতিশীল করতে যতটা সহযোগিতা দরকার তা করা হবে।’
তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ের চলমান প্রকল্পগুলো সফলভাবে সম্পন্ন করার পাশাপাশি ইশতেহারে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করাও তার লক্ষ্য। ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জ বলেও মনে করেন তিনি।
মন্ত্রণালয়ের কাযর্ক্রমে ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের চলমান কিছু প্রকল্প রয়েছে সেগুলো শেষ করতে চাই। একইসঙ্গে ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হবে। আমাদের ইশতেহারেই রয়েছে, আমরা ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ তৈরি করবো। বাংলাদেশের যেসব নদীর নাব্য হারিয়ে গেছে, তা ফিরিয়ে আনার জন্য ড্রেজিং করা হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে নৌযোগাযোগ স্থাপনে পদক্ষেপ নেবো, কাযর্ক্রম চালাবো।’
নৌপথের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কথা তুলে ধরে তার মন্ত্রিসভার এই সদস্য বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার শিশু বয়সে নৌকায় করে ঢাকা এসেছিলেন। ৪/৫দিন লেগেছিল তার ঢাকায় পৌঁছাতে। আমার তো মনে হয় না এই ধরনের অভিজ্ঞতা বর্তমান প্রজন্মের অন্য কারও আছে। তিনি তার অভিজ্ঞতা দিয়েই এই বিষয়টির ওপর নজর দিয়েছেন। আমার দায়িত্ব হবে সেটাকে এগিয়ে নেওয়া।’
অতীতের সরকারগুলোর সময় নদীপথ ছিল অবহেলিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা দেশটাকে নদীমাতৃক বলে থাকি। এ কারণে নৌপরিবহন খাতে আমরা যতটা এগিয়ে যাওয়ার কথা, সেইখাতেই আমরা সব থেকে পিছিয়ে গেছি। স্বাধীনতার পর যেখানে বাংলাদেশের ২৪ হাজার কিলোমিটার নদী পথ ছিল, তা কমে ৪ হাজার কিলোমিটারে নেমে এসেছিল। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা ও পদক্ষেপের কারণে গত ১০ বছরে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার নদীপথ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশের নদী পথের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে খালিদা মাহমুদ বলেন, ‘ভৌগোলিক কারণে আমরা ইস্টওয়েস্টের মাঝখানে আছি। নৌবন্দরগুলোর সক্ষমতা আমরা বাড়াতে পারলে জাতীয় অর্থনীতিতে সেটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। ’
ঢাকাকে ঘিরে যে নদীগুলো রয়েছে তার উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা বালু নদী এগুলো আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই নদীগুলোকে মানুষের জীবনে কাজে লাগাতে চাই। আমাদের অর্থনীতিতে নদীর ভূমিকা রাখতে চাই। এগুলো দূষণমুক্ত ও তীরগুলো দখলমুক্ত করে ইকোপার্ক করবো। তার কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। ঢাকা শহরের ভেতরে যে ক্যানেলগুলো রয়েছে তা পরিষ্কার করা হবে। সুয়্যারেজ লাইনে যে গার্ভেজ রয়েছে এগুলো নদীর মধ্যে না ফেলে কীভাবে রিসাইক্লিং করে অন্য কাজে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এতে করে নদী দূষণটা বন্ধ করতে পারবো। নদী দুষণমুক্ত করতে এর কোনও বিকল্প নেই। তবে, এজন্য অন্যান্য মন্ত্রণালয়গুলোর সহযোগিতা দরকার। কারণ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে নদী দূষণমুক্ত রাখা সম্ভব নয়। স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র, শিল্প, পরিবেশসহ আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয় আছে। সবার সম্মিলিত পদক্ষেপ লাগবে। ’
তিনি বলেন, ‘পানগাঁও টার্মিনালটি ভালোভাবে কাজ করতে শুরু করেছে। তবে, এখানে কিছু টেকনিক্যাল ত্রুটি রয়েছে, এগুলো সারিয়ে ফেলা হবে। এটা খুবই উপযোগী ও সাশ্রয়ী। চট্টগ্রাম বন্দরে যে মালামাল খালাস হয়, তা রাস্তা দিয়ে কেরিং করে ঢাকায় আনতে অনেক বেশি খরচ হয়। রাস্তায় যানজট তৈরি হয়। মাঝে মধ্যে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সড়ক পথে সময়মতো মালামাল আসতে পারে না। এতে দামও বেড়ে যায়। এটাকে সব সময় সচল রাখতেই হবে।’
- নোয়াখালীতে সমুদ্রবন্দর হবে: খালিদ মাহমুদ চৌধুরী
- ‘দুর্বৃত্তরা নির্বাচনে নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা চালাতে পারে’
- সুষ্ঠু নির্বাচনে আলোর রেখা দেখছি : ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
- ‘সংলাপ ভালো হয়েছে, ফলাফল ভালো হয়নি’
- ‘আ. লীগের প্রতিপক্ষ হওয়ার সামর্থ্য ঐক্য প্রক্রিয়ার নেই’
- মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবি যৌক্তিক: রাশেদা রওনক খান
- ‘নারীরা ঘরে বাইরে পুরুষের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে’
- ‘বিমসটেকের মতো সামিটে রাজনৈতিক ইস্যু ফরমাল এজেন্ডায় রাখা যায় না’
- ‘ঋণ হালনাগাদ হলেও অর্থনীতিতে সুফল বয়ে আনবে না’
- কাদের গণি চৌধুরীর সাক্ষাৎকার
সব পক্ষই আইনটির বিরোধিতা করেছেন - ‘যুক্তফ্রন্ট অ্যাডভান্স কিংস পার্টি, ঘোলা পানির অপেক্ষায় আছে’
- মার্কিন নাগরিকত্ব স্যারেন্ডার করেছি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- পরিবহন সমিতির নেতারা আইনের ভাষাই বুঝতে অক্ষম: রাশেদা রওনক খান
- টিআইবির প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করেছেন সিইসি
- ‘আ. লীগের মনোনয়নে প্রত্যাশা অনুযায়ী পরিবর্তন আসেনি’